হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৫তম শাহদত বার্ষিকী উপলক্ষে ওজোপাডিকো’র পক্ষ থেকে সারাদিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ওজোপাডিকো’র অধীনস্থ সকল দপ্তরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত, সকাল ৮:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ বেতার, খুলনায় অবস্থিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, ফজরবাদ ওজোপাডিকোতে অবস্থিত মসজিদসমূহে একশতবার কুরআন খতম এবং জোহরবাদ সকল মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দোয়া মাহফিল ও জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত শেষে এতিম, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে সুস্বাদু খাবার বিতরণ করা হয়। বেলা ৩:০০ ঘটিকায় ওজোপাডিকো’র সদর দপ্তরের সাথে ৬৩টি দপ্তরকে সংযুক্ত করে জুম এ্যাপসের মাধ্যমে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শহীদ পরিবারকে স্বরণ করে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ওজোপাডিকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: শফিক উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, এখনও কোন নির্জন দুপুরে কিংবা গভীর রাতে একাকী অবস্থানকালে শুনতে পাই সেই বজ্রদীপ্ত কন্ঠস্বর ‘‘মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’’ আর হৃদয়ে সাড়া জাগায় সেই গান ‘‘শোন একটি মুজিবের থেকে লক্ষ মুজিবের কন্ঠস্বরে ধ্বনি প্রতিধ্বনি।” বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গলিরা ১৯৪৭ সাল থেকে অনুভব করেছিল। যদিও তিনি ছিলেন তখন তরুন শেখ মুজিব। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তাঁকে আমরা আরও কাছে পেয়েছি। ১৯৫৪ সালে তিনি আমাদের মাঝে অপরিহার্য হয়ে দেখা দিয়েছিলেন রাজনীতির মাঠে। তিনি স্বশরীরে আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। তবে ৫২ তে কারাগারে থেকেও তিনি ছিলেন মিছিলের পথসভায়। যে নির্বাচনে মুসলিম লীগকে একটি বাতিল রাজনৈতিক দলে পরিণত করে বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বার উন্মোচন ঘটেছিল। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা যখন বাঙ্গালিদের উপর নিপিড়ন নির্যাতন শুরু করে, বাঙ্গালির মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে থাকে তখন তাদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আন্দোলনের মাধ্যমে দূর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান এক বৈশম্যমূলক শিক্ষানীতি আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। সেই বৈশম্যমূলক শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সফল নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর ৬ দফা ঘোষণা করলেন। ৬ দফার সমর্থনে সারা দেশে শুরু হলো এক অভূতপূর্ব জাগরণ। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানীরা তাদের প্রতিহিংসায় পরিণত করে যার ফলশ্রুতিতে কারাগার নিক্ষেপ করে। কিন্তু তাতে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য বা আদর্শ, তাঁর একনিষ্ঠ সংগ্রাম দেশ ও মানুষকে নিয়ে তাঁর ভাবনা ও স্বপ্ন একচুলও বিচলিত হয়নি। ১৯৬৯ এর গণজাগরণ তাঁকে সামরিক কারাগার থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র মানচিত্র।
পুরো একাত্তর বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধুকে মনে প্রানে ধরে রেখে তাঁর নেতৃত্বে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলার আকাশে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে। ১৯৭২ এ জানুয়ারীতে বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন। বাঙ্গালি তাঁকে বরণ করে নিল সাময়িক বিচ্ছেদের পর, যদিও এ বিচ্ছেদ ছিল শুধু তাঁর শারিরীক অনুপস্থিতি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন বাঙ্গালির এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামে উদ্দীপনা যুগিয়েছেন। সেই ১৫ই আগষ্ট শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য ১৮ জন সদস্যকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর বাঙ্গালি রাস্ট্রের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চেষ্টা শুরু হয়। তাঁকে ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তাঁর সব অর্জনকে অস্বীকার করে, তাঁর সব চিহ্ন মুছে ফেলার আয়োজন শুরু হয়। কিন্তু যাকে বাঙ্গালি মনেপ্রানে ধারণ করে স্বাধীনতা পেয়েছে তাঁকে ভূলিয়ে দেওয়াটা কত অবাস্তব চিন্তা, কুশিলবরা তা বুঝতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে হারাবার এ শোকাবহ দিনে আমাদের একটাই প্রত্যয় হোক শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুর অসামাপ্ত কাজকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ওজোপাডিকো’র প্রতিটি কর্মীকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও প্রকৃত সেবামূলক কাজ করে যেতে হবে। এই হোক আমাদের প্রত্যয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের মাঝে যাদের রায় এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
উক্ত আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওজোপাডিকো’র নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ এফসিএমএ, কোম্পানি সচিব আবদুল মোতালেব এফসিএমএ, মোঃ আলমগীর কবীর, উপ-মহাব্যবস্থাপক (এইচআর এন্ড এডমিন)। সভায় সভাপতিত্ব করেন ওজোপাডিকো’র প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এবং অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনের দায়িত্ব পালন করেন ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ নাজমুল হুদা।